।।বাক্‌ ১১৬।। তাজমীর উজ জামান



চারটি কবিতা : তাজমীর উজ জামান  


রাশিফল

পৃথিবীর সমস্ত গ্রন্থাগারে
"আপনার হারানো প্রেমের সাথে দেখা হবে আজ"-
এই রাশিফল-লেখা পত্রিকাপাতা চুরি যায়,
পৃথিবীর পাঠাগারে তাই আমাদের দেখা হয় না  
নক্ষত্রের সাথে জীবনের শুভাশুভ-যোগ 
ক্রমেই জ্যোতিষী করে তুলেছে আমাকে তবু;
 আর
তুমিও ভবিষ্যৎ
 বক্তা যেন--
শেষবার দেখা হয়ে যাবার বেদনা পেতে অপেক্ষা করো ।



প্রতিমা

সুন্দরের কাছে পৌঁছুতে আমরা যে সেতু উদ্ভাবন করি
তোমার বুকের মাঝে সেই সেতু আছে,
যেভাবে মানুষ কাদামাটির প্রতিমা থেকে
গড়ে তোলে প্রার্থনার শুদ্ধ শরীর
সেভাবে তুমিও প্রার্থনা
 
সম্ভাবনার সব সূত্র মেনে--তোমাকেও মা নামে ডাকা যায়,
যেকোন সন্ততির চেয়ে
যিনি এই পৃথিবীকে অন্তত দশমাস বেশি দেখেছেন ।


বাস্তুসাপ

আমরা যেহেতু কবি
আমাদের বাগানের ছোট ফুলগাছটিকে মেয়ের মত দেখি,
জানালার কাছে দাঁড়ানো যে শেফালি
ঘরের লোকের মত কথা বলে
 
আমরা যেহেতু কবি
যেকোন উঁচানো ফণা অগ্রাহ্য করে সাপেদেরও ঠাঁই দেই :
বাস্তুভিটার ভাগ বুঝিয়ে দিয়ে কোলে টেনে নিয়ে ডাকি,
'আয় বাস্তুসাপ'
 



ছেদ

অন্ধকার তোমাকে নীরব করে,
আলোতে তবুতো কিছু চোখে কথা-বলা থাকে,
আঁধারে সেটুকু নেই
 
পাহাড়েও গোলযোগ হয়
আমাদের পায়ের নিচের যে সমতল,
 বলতে গেলে, 
তোমাকে আমার সাথে কোনভাবে যুক্ত রেখেছে এখনো,
সেখানেও পাহাড়ে'রা জমাট ছেদের মত
দাঁড়িয়ে আছে
 
মাঝরাতে ঘুম থেকে ভেড়ার খামারি হয়ে জেগে উঠি যেন
বাকি রাত ভেড়াদের গুনে গুনে কেটে যাবে
এই বিভীষিকা নিয়ে জেগে থাকি
 
নীরবতা তোমার বাড়ির কাছে জংলি লতার মত
প্রতিদিন খুব দ্রুত বেড়ে উঠছে
এবং ছড়িয়ে যাচ্ছে,
 যেন
পৃথিবীকে আবার বনের দেশ বানিয়ে তুলছে তারা
 
তুমিও আমিও শীঘ্রই এমন নীরব হয়ে যাবো 
যেন কখনো হঠাৎ দেখা হলে
মাটিতে চিত্র এঁকে কুশল জানাতে হবে,
 আর
দশহাত মাটি খুঁড়ে তবেই বোঝানো যাবে
গভীরতা ভালোবাসবার ।




No comments:

Post a Comment